কল্লোল ক্লাব আমাদের কাছে একটা বিশেষ ভালোবাসার জায়গা। অনেক সাধের একটা আস্তানা। সেই বিশেষ জায়গায় যখন কোনো বিশেষ মানুষ আসে, সেটা সর্বার্থে মনে রাখার মতো একটা ঘটনা হয়. অনিন্দ্যর সঙ্গে আমার কথোপকথনের, তাও প্রায় 1.30 ঘন্টার মতো, আমার মনে হয়েছিল যে এতো পরিচিত যার কাজ, তার আর নতুন কি পরিচয় ঘটাবো? কিন্তু যার এতগুলো পরিচয়, তার সঙ্গে কথা বললেই, সেই আড্ডা খুব মনোজ্ঞ হয়, বলাই বাহুল্য। সেদিন একটা অত্যন্ত দর্শক শ্রোতার সঙ্গে আদান প্রদান মূলক অনুষ্ঠান হয়েছিল। লিখলে, সেই flavor টা হয়তো আসবেনা, কিন্তু সেদিন আমার কিছু জিজ্ঞাস্য আর তা নিয়ে ওঁর ভাবনাচিন্তা এখানে তুলে দিচ্ছি।
তোমার পছন্দের কোনো গান আর সেই গানটা লেখার পেছনের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক।
ওই ভাবে বলা শক্ত হলেও, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ গানটার কথাই বলবো। এটা একটা ট্রেন জার্নি, ভোর বেলা, বার বারেই লাইনটা আর তার সুরটা মাথায় আসছিলো, এভাবেও ফিরে আসা যায়, বাকিটা পরে লিখেছি, খানিকটা সত্যি খানিকটা কল্পনার মিশেল, কিন্তু এই গানটা লেখার পর মনে হয়েছিল যে আমিই বার গান রেকর্ড করতে পারি। গানটার lyrics এ হয়তো syntax এর বা ব্যাকরণের ভুল ছিল, কিন্তু, এই যে হেমন্তবাবু, মান্নাবাবু এঁরা গেয়ে গেছেন, আরও অনেক অনেক মানুষ, সেখানে গান রেকর্ড করার যে confidence টা, সেটা আমায় এই গানটা দিয়েছিল।
এই প্রসংগে মনের গুপ্তচর গানটার কোথাও মনে হচ্ছে ‘তোমার পাশেই আমার ছায়া নেই জানি, আমার ছায়া তোমার ধারে কাছেই ’, কখনো ফিরে দেখলে মনে হয়েছে কি যে ভেবেছিলাম ছায়া নেই, কিন্তু হয়তো ছিল ছায়া ?
(হাসি) না, আসলে এটা তো প্রাক্তনের গান, যেখানে দুজন মানুষ খুব কাছাকাছি ছিল, এখন আবার অনেকদিন পর দেখা, reunited হচ্ছে, অনেক কথা বলার ইচ্ছে, কিন্তু বাধা আছে, আবার সেই বাধা টা পেরিয়েও মনের একটা সংযোগ হচ্ছে, কোথায় ঘর, কে আপন কে পর, সেটা শুধু মনই জানে, মনই আসল গুপ্তচর।
এবার একটু পিছিয়ে যেতে চাই ….শুভ মুহরত আর তারপর অজিত এর ভূমিকায় সত্যান্বেষী তে অভিনয়, ঋতুপর্ণ ঘোষ এর সঙ্গে এই experience টা যদি একটু share করো।
আমি অভিনেতা হিসেবেই তিমিদ, কিন্তু নয় নয় করে ২০ টা মতো সিনেমায় অভিনয় করে ফেললাম। এই ঘটনাটার পেছনে মূল নায়ক কিন্তু ঋতুদা। আমার অভিনয় করার ব্যাপারে অনীহা দেখে বলেছিলেন যে তুই যেমন, তেমন ভাবেই যদি behave করিস, তাহলেও চরিত্র টা কিন্তু দাঁড়িয়ে যাবে। তাতেও আমার দ্বিধা কাটছে না দেখে শেষ অস্ত্র টা প্রয়োগ করলেন, বললেন যে তোর হিরোইন কিন্তু নন্দিতা দাস হবে। ব্যাস, আর খুব একটা convincing এর দরকার হয়নি, নন্দিতা তখন যে প্রেক্ষাপট টা নিয়ে আসছে, সে তার background, বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্য, সব মিলিয়ে একটা fantasy, তখুনি হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। আর সত্যান্বেষী, পরে ভাবি যে ভাগ্যিস করেছিলাম, কারণ, এর শুটিং শেষ হবার একদিন এর মধ্যে ঋতুদা আমাদের ছেড়েচলে যায়, কাজেই সেই সময়টা অত কাছাকাছি কাটানো, এই অভিজ্ঞতার ভান্ডার টা মিস হয়ে যেত, যদি না এই সিনেমাটা করতাম। তাছাড়া শুভ মূহরত একটা পরিচিতি দিয়েছিল, যেটা ওই সিনেমা টা না করলে পেতাম না।
ঋতুপর্ণ প্রসঙ্গেই তোমার রোববার পত্রিকার সম্পাদনার কথাটা আসে … সেটা সম্পর্কে কিছু বল যদি।
রোববার পত্রিকার দায়িত্ব আমার ২০০৬ থেকেই ছিল। কিন্তু ২০১৩ এ ঋতুদার হঠাৎ চলে যাওয়াটাই সম্পাদকের দায়িত্বটা হঠাৎ এসে পরে। প্রথম সম্পাদকীয় লেখাটা, ঋতুদা যাবার পর, খুব শক্ত ছিল। লিখেছিলাম যে আমার দায়িত্ব অনেকটা অরণ্যদেব এর মতো। একজন অরণ্যদেব যখন মারা যায়, আরেকজন তার পোশাক পরে নেয়, কাউকে জানতে দেয়না, শোকের সময় থাকেনা, কাজটা সুষ্ঠ ভাবেই চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়। ঋতুদার মৃত্যু আমাকে সেই অরণ্যদেব করেছে । ঋতুদার লেখা First Person খুব জনপ্রিয় ছিল। আমার লেখাটার নাম হলো অকিঞ্চিৎ। এটার শব্দের মানে সবাই জানে, কিন্তু আমরা লিখতাম অ-কিঞ্চিৎ, অর্থাৎ অনিন্দ্যর কিঞ্চিৎ। এখানে আমার acceptance পেতে কিন্তু একটু সময় লেগেছে, ৪/৫ বছরের একটা process ছিল gradual acceptance-এ। কিন্তু যখন পেয়েছি সেই acceptance টা, সেটা আমার কাছে একটা খুব বড় reward। লেখালেখি একটা slow process বলে আমি মনে করি, লেখকের লেখার একটা ভ্রমণ থাকে, চটজলদি সেটা হয়না, হওয়া উচিত ও নয়।
আমি মনে করি আমাদের প্রজন্ম, যারা গোঁসাই বাগানের ভূত, মনোজদের অদ্ভুত বাড়ির মতো fantasy পড়ে বড় হয়েছে, তাদের মতো লাকি খুব কম আছে । যে পড়ছে, কল্পনায় তার মন যে কোথায় চলে যাচ্ছে, যারা পড়েছে তারা জানে। সেখানে যখন শুনলাম যে এটা movie হচ্ছে, আমার মনে হয়েছিল যে মনোজদের অদ্ভুত বাড়ির স্ক্রিপ্টের কথা ভাবার ও যে সাহস করে, লেখা তো ছেড়েই দাও, সে সত্যিই সাহসী । এই যে ঘরোয়া বাঙালি একটা fantasy, যেটা Avengers, বা ব্রহ্মাস্ত্র থেকে আলাদা কিন্তু দারুন fantasy। এর চিত্রনাট্য লেখার process টা, journey টা সম্পর্কে কিছু বোলো।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর এই ধরণের লেখার সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে, তারা জানেন যে এই জগৎ টা যতটাই magical, ততটাই আটপৌরে। Opulence নেই, কিন্তু magic realism আছে । সেখানে alien ও আসতে পারে, কিন্তু সেটা খুব মানবিক একটা জগৎ। আমি এই script টা করার আগে শীর্ষেন্দু বাবুর একটা লম্বা interview নিয়েছিলাম। আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল এটা কোন জায়গা নিয়ে লেখা? আমি এটা পূর্ব মেদিনীপুর এ location করেছিলাম। সিনেমার ক্ষেত্রে এটা unexplored খানিকটা। আমার মনে হয়েছিল যে উনি যে গল্পটা বলছেন, তার বাইরেও একটা layer আছে।
গুপ্তধন মানে কি শুধুই ধনসম্পত্তি নাকি আরও দামি কিছু, এই ভাবেই আসতে আসতে একটা shape পেয়েছে। আর একটা কথা না বলেই নয় যে আমার স্ত্রী মধুজা আমাকে সমানে বলেছে যে কেউ যদি এই সিনেমাটা করতে পারে সেটা তুমি। এই support টা না পেলে এই movie টা করার সাহস হতো না।
বেলাশুরুর title track তোমার, আর এই মুভিতে তুমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে কাজ করেছো আর মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি তেও, ওঁর সঙ্গে তোমার interaction নিয়ে কিছু শুনতে চাই।
নিজেকে fortunate মনে করি যে ওঁর সঙ্গে এতো কাছ থেকে সময় কাটাতে পেরেছি । প্রচুর আড্ডা, গল্প, গল্প শোনা এই সবের সুযোগ পেয়েছি। শিশির ভাদুড়ী, অহীন্দ্রা চৌধুরীর মতো মানুষদের গল্প শোনা ওঁর থেকে, এটা একটা বিরাট পাওয়া আমার। একজন মানুষ যিনি একজন অতি successful সিনেমার hero, আবার কবিতা লেখেন, আবৃত্তি করেন, পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, শানিত sense of humor, এই যে ব্যাপ্তি, এটা কজনের মধ্যে পাওয়া যায়? ওঁর ৬০ তম birthday তে একটা surprise gift ছিল রোববার পত্রিকার তরফ থেকে। ওঁর ফ্যামিলির মানুষদের অনেককে নিয়ে লেখা। মেয়ে, ছেলে আর আমি একটা লেখা লিখেছিলাম ওঁর স্ত্রী দীপাদির থেকে অনেক তথ্য নিয়ে, দীপাদির জবানিতে, ওঁদের প্রেম নিয়ে । পুরোটাই surprise ছিল । খুশি হয়েছিলেন।
তোমার মুভি ওপেন টি বায়োস্কোপ বা প্রেম টেম, দুটোতেই দেখেছি, সেই উত্তর কলকাতায় বলো বা চন্দননগরের গঙ্গা, সিনেমাটোগ্রাফি তে একটা প্রিটেনশন ছাড়া উপস্থাপনা আছে। কোনো ভনিতা নেই অথচ সুন্দর …।
আমায় একজন বলেছিলেন যে অনিন্দ্য, তুমি লিখতে পারো, কিন্তু movie-র script-এর সময় সবটা লিখনা, visual টা খুব important। মুখে না বলে একটা চাউনি দিয়ে বলা। এই কথাটা আমার সঙ্গে stick করে থেকেছে, আর তাছাড়া আমি আমার movie-তে যেমন নতুন মুখ খুঁজি, তেমন নতুন location ও খুঁজি। Location exploration টা জরুরি, সেটাকে তার নিজস্ব রূপেই দেখানোর চেষ্টা করি, চন্দননগরের গঙ্গা যেমন resplendent।
Thank you তোমার সেটা ভালো লেগেছে।
সাংবাদিক, চিত্রনাট্যকার, গায়ক, ব্যান্ড পরিচালনা, মুভি ডিরেক্টর, অভিনেতা, কোন ভূমিকার সঙ্গে নিজেকে সব থেকে বেশি আইডেন্টিফাই করো?
সব কিছুর কোর আমার লেখা। যা বলতে চাইছি, সেটা লেখালেখির process-টার মধ্যে আছি বলেই, সেটা গান ই হোক বা চিত্রনাট্য। সেটাকে যদি শানিত করা যায়, তাহলে বাকি সব গুলো ঠিকঠাক করতে পারা যায়।
চন্দ্রবিন্দু, থ্যাংকফুলী, একটাই দল যারা এতো বছর একসঙ্গে, এর রহস্যটা কি ? কোনো ফর্মুলা আছে ? এর সঙ্গে আরও একটা কৌতূহল যে খ্যাতি কি তোমাদের বন্ধুত্বের Dynamics এ কোনো change এনেছে?
না, dynamics এ কোনো change আনেনি। একটা কলেজ এর বন্ধুর যে সম্পর্ক সেটা এখনো কাজ করে। যেটা আমাদের মধ্যে আছে সেটা হচ্ছে division of labor, যার যেটা expertise, সেই সেটা নিয়ে কাজ করেছে, যে লিখতে পারে সেই লিখেছে, যে composer সেই সেটা করেছে, কেউ marketing ভালো পারে, সেটা করেছে. আর আমাদের 10th album বার করবো, এই ভাবে চলছে।
চন্দ্রবিন্দু থেকে অনিন্দ্য কতটা স্বতন্ত্র একটা নাম?
একটা সময় এর পর আমরা সবাই নিজের নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় এর খোঁজ করেছি. আমি চাই একটা ভালো editorial লিখতে, চন্দ্রিল কলেজ লাইফ থেকেই অত্যন্ত ভালো বক্তা, সেই পরিচয়টা explore করেছে, উপল cartoonist, তাই আমাদের collective identity যেমন আছে, তেমন আবার আলাদা আলাদা ভাবেও নিজেদের কে খুঁজেছি।
এটাই হয়তো তোমাদের ব্যান্ড এর একসঙ্গে টিকে থাকার ফর্মুলা।
হয়তো তাই।